এস.এম সাইফুল চৌধুরী
স্টাফ রিপোর্টার, কক্স টিভি, কক্সবাজার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মো. বাবুকেও (৩৬) উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ভেজথানি হাসপাতালে পাঠিয়েছে সরকার। রাজধানীর শনির আখড়ায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার চার মাসে কোনও উন্নতি না হওয়ায় তাকে দেশের বাইরে পাঠানো হলো। তার বোন সুবর্ণা তার সঙ্গে গেছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির আহ্বায়ক নাহিদা বুশরা এই তথ্য জানিয়েছেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে গুলিবিদ্ধ মো. বাবুকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর তাকে বিদায় জানান।
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে একটি চার্টার্ড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডের ভেজথানি হাসপাতালে নেওয়া আন্দোলনে আরেক আহত কাজলকে।
এসময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, আহতদের চিকিৎসায় সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। দেশে যাদের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না, তাদের দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এমন আরও কয়েকজন এ তালিকায় রয়েছেন।
এ সময় আহত বাবুর মা সাংবাদিকদের বলেন, ২০ জুলাই থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বাবুর চিকিৎসা পরিবারের খরচেই হয়েছে। সে সময়ে তার চিকিৎসায় সংসারের সব অর্থ ব্যয় হয়ে গেছে। এরপর আর আমাদের কাছে কিছু ছিল না। ঋণ করেও খরচ দিতে হয়েছে।
ছেলের জন্য দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, সে সুস্থ হয়ে আসুক। দেশের জন্য যে যুদ্ধটা করেছে, সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, দেশে এসে যেন একটা কিছু করে খেতে পারে।
যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ার বাসিন্দা মো. বাবু বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে। তিনি নয়াপল্টনের একটি ছাপাখানায় কাজ করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় ছাপাখানা। কিন্তু বাসায় বসে থাকেননি বাবু, নেমে পড়েন আন্দোলনে। শনির আখড়ায় বাসা হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন আন্দোলনে যেতেন তিনি। গত ২০ জুলাই তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় গঠিত টিমের সদস্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির হিমু জানান, বাবুর পেটের নিচের অংশ দিয়ে ঢুকে কোমরের পেছন দিয়ে বের হওয়ার সময় বুলেট ছিন্নভিন্ন করে যায় তার খাদ্যনালী, মূত্রথলি আর কোমরের হাড়। চিকিৎসকরা তার পেটে দুবার অপারেশন করেছেন। তার খাদ্যনালীর অনেকাংশ কেটে ফেলতে হয়েছে তার। বাকি অংশ পেটে ফুটো করে আলাদা করে মলত্যাগের রাস্তা বানানো হয়। কিন্তু তার অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি।
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে বাবুকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিছুদিন পর অবস্থা আরও খারাপ হয় তার। মেডিক্যাল বোর্ড তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডের চিকিৎসক এসে বাবুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা তাকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।
মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত বাবুকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
© 2021 - All Rights Reversed Coxs TV | Web Developed by Hostbuzz Inc