আজ, শনিবার | ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



চকরিয়ায় শান্তিপূর্ণ ইউপি নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সাড়ে ১২শত সাজা ও পরোয়ানা তামিল করে পুরস্কৃত

আবদুল মজিদ,চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়া থানা এলাকায় গত ৫মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দুই ধাপে দুইটি সুষ্ঠু ইউপি নির্বাচন, সর্বোচ্চ সাজা ও ওয়ারেন্ট পরোয়ানা তামিল করে পুরস্কৃত হয়েছেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি। তিনি যোগদানের পর থেকে চকরিয়ার প্রায় ৬লক্ষাধিক মানুষের কাছে বাংলাদেশ পুলিশের সেবা দৌড়গোড়ায় পৌছে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। দায়িত্বপালনকালে আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানাভূক্ত আসামীসহ কোন অপরাধীকে থানায় আশ্রয় পশ্রয় দেননি বলে অভিমত সচেতন মহলের। সম্প্রতি জন্মদিনের কেক কাটার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবির আলোকে ওসি ওসমান গনিকে চকরিয়া থাকা থেকে প্রত্যাহার করেন জেলা পুলিশ। উক্ত বিষয়টি পূণ:বিবেচনা করার জন্য আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, চকরিয়া থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে মুহাম্মদ ওসমান গনি যোগদান করেন ১৮ অক্টোবর’২১ইং। তিনি যোগদানকালীন সময় থেকে মেয়াদকাল ১৭মার্চ’২২ইং পর্যন্ত ৫মাসের দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ ফরিয়াদিদের সর্বোচ্চ আইনী সেবা দিয়েছেন। বিগত ২৬ নভেম্বর ও ২৮ ডিসেম্বর’২১ইং দুই ধাপে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন। উক্ত দুইটি ধাপের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ভালো রাখতে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়েছেন ওসি ওসমান গনি। বিশেষ করে চকরিয়ার ইউপি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসনসহ সারাদেশ ব্যাপী আতঙ্ক,উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ছিল। কিন্তু উত্তেজনার মধ্যে চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি দেখিয়ে দিয়েছেন প্রাণঘাতি ছাড়া কিভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন উপহার দিতে হয়। এই নির্বাচন ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। নির্বাচনের পর এক প্রকার স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলেছেন চকরিয়াবাসী। ওসি ওসমান গনি ৫মাসের দায়িত্বপালনকালে সাজা ও গ্রেফতারী পরোয়ানাভূক্ত আসামী ৯৯২ আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ্দ করেন। এছাড়া নিয়মিত মামলা ও অন্যান্য মামলায় ২৫২ আসামীকে গ্রেফতার করেন। তিনি এলাকা ভিত্তিক মাদক বিরোধী ১৫-২০টি সভা করেন। বাংলাদেশ পুলিশের ঐতিহ্য, সুনাম ও খ্যাতি রক্ষায় কমিনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে স্ব স্ব এলাকায় গিয়ে অনেক বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন। যার কারণে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে থানা ও আদালতে যেতে হয়নি ভূক্তভোগী জনগনকে। মামলার জট নিরসন করতে সচেষ্ট হয়েছেন। অপরাধ নিরোধ ও জনসচেতনা সৃষ্টিতে জুমার নামাজে মসজিদ ভিত্তিক ও স্কুল-কলেজ ভিত্তিক মূলক সভা করেছেন। সভায় সাধারণ মানুষকে আইনের শাসন নিয়ে ধারণা দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণিকে চকরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার বিষয়ে এক সাক্ষাতকারে চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক আবদুল মজিদ জানান, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলের জেরে সংঘটিত মারামারির ঘটনায় তিন বছর আগে (২০১৯ সালে) করা একটি মামলার আসামিরা বিগত দুই/আড়াই বছর ধরে তাদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করে আসছে? এর ভিতরে আরও দুইজন ওসির আমলেও ছাত্র নেতাদের অনেকবার থানায় আসা-যাওয়া করতে দেখেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় বা পারিবারিক প্রোগ্রামে সিনিয়র রাজনৈতিক নেতাদের সাথে প্রকাশ্যে ফটোসেশন বা মঞ্চে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। সাধারণ পাবলিক বা সংবাদ কর্মীরা ধরে নিয়েছিল, একই রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা যেহেতু, হয়তোবা তাদের মধ্যে সমাধান হয়ে গেছে বা সিনিয়র নেতাদের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়ে গেছে? অন্য সবার মতো ওসি ওসমান গণিও স্কুল ছাত্র ও ছাত্র নেতাদের আবদার রাখতে গিয়ে ফটোসেশন করে, তার চাকুরী জীবনের সকল অবদান মুহূর্তের মধ্যে ম্লান করে দিলেন! যা সত্যি দুঃখজনক বলে অবহিত করেন তিনি।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আলম কমিশনার বলেন, চকরিয়ায় দুই ধাপে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন ও গত ৫ মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে ভূমিকা রেখেছেন ওসি ওসমান গনি। সামান্য একটা ভুলের কারণে তার চাকুরী জীবনের এমন অঘটন সত্যিই দুঃখজনক।

সূত্রে জানায়, বহু ক্লু-লেস মামলার তদন্ত কার্যক্রম তিঁনি সাহসিকতার সাথে এগিয়ে নিয়ে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষ করে চকরিয়া থানায় ওসির দায়িত্বভার গ্রহণের কয়েকদিনের মাথায় পৌরশহরে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ি লতিফ উল্লাহ হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের মাষ্টারমাইন্ড ছিলেন জমিদারের ছেলে আসিফ। হত্যাকাণ্ডের পর সেই মাষ্টারমাইন্ড আসিফও যোগ দিয়েছিলেন হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামা ব্যবসায়ি সমাজের সাথে। তখনও কারো ধারণাতেই ছিল না ‘জমিদারের ছেলে আসিফই’ লতিফ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।

এই হত্যাকাণ্ডের মাত্র একমাসের মাথায় পুরো আদ্যোপান্ত বিশেষ করে কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড, কতদিন আগে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, কারা কারা জড়িত ছিল সেইসব বের করার কাজে বেশ তৎপর ছিলেন ওসমান গনি।

শেষপর্যন্ত মূল পরিকল্পনাকারী জমিদারের ছেলে আসিফ, সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ভাড়াটিয়া মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। এমনকি আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট’র কাছেও এই হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য, পরিকল্পনা থেকে শুরু থেকে কারা কারা অংশ নিয়েছিল সেইসব তথ্য ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত মিজানুর রহমান। মূলতঃ পুলিশ কর্মকর্তা ওসমান গনির তৎপরতাতেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই সফলতা এসেছিল। ব্যবসায়ি লতিফের পরিবারও জানতে পেরেছিলেন হত্যাকারী কারা।

চকরিয়া থানায় ওসি হিসেবে তিঁনি দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র চারমাস। এই সময়ের মধ্যে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধ করার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গরু চুরি, ডাকাতি, মাদকের কারবার, কিশোর গ্যাং দমনে বেশ সফলতাও ছিল তাঁর। পুরো উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ সফলও হয়েছিলেন তিঁনি।

নতুন যোগদানের কয়েকদিনের মাথায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ওসির সাথে থানায় দেখা করতে গেলে ছাড় দেননি মোক্তার হোসেন নামের এক ব্যবসায়িকেও। এছাড়া অপর একটি অভিযোগের স্বাক্ষী দিতে থানায় গেলে অন্য মামলার পরোয়ানাভুক্ত এক নারীকেও গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছিলেন ওসি ওসমান গনি।

গত ২ মার্চ ওসির জন্মদিন উপলক্ষে আস্ত কেক নিয়ে থানার ওসির কক্ষে ঢুকে পড়েন ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী একদল যুবক।
ওসির ভাষ্যানুযায়ী- কেক কাটা যাবে না মর্মে বারণ করার পরেও তারা ছিলেন একেবারে নাছোড়বান্দা। শেষপর্যন্ত আবদার রাখতে গিয়ে চাকরিজীবনে এমন কালিমালিপ্ত হবে তা কল্পনাতেই ছিল না ওসির। কারণ তিঁনি একেবারেই জানতেনও না যে, সেই দলবদ্ধ যুবকদের মধ্যে দুইজনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল সেই বিষয়টি। যদি আগে থেকেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে বাদীপক্ষ যোগাযোগ করতেন, তাহলে তিঁনি জানতে পারতেন যে তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার বিষয়টি।
শেষপর্যন্ত তাদের আবদার রাখতে গিয়ে ওসি ওসমান গনির অজান্তেই চাকরিজীবনে বড় ধরণের খেসারত দিতে হল তাকে। এদিকে, উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে ১৬মার্চ রাতে অনলাইনে সংবাদ প্রচার হলে ১৭মার্চ সকালে তাকে চকরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন কক্সবাজারে অর্ন্তভূক্ত করে জেলার পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান। সচেতন মহল বিষয়টি পূণ:র্বিবেচনা করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।

ওসি ওসমান গনি বলেন- গত ২ মার্চ আমার জন্মদিন ছিল। সেইদিন ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে বেশ কয়েকজন কেক নিয়ে অফিসে হাজির হয়। তাদের মধ্যে আরহান মাহমুদ রুবেল ও আলিফের নামে আরেক ছাত্রলীগ নেতা তারেকুল ইসলাম হত্যাচেষ্টার মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল, যা আমি একেবারেই অবগত ছিলাম না। কারণ আমি যোগদান করেছি কয়েকমাস হয়েছে। তাই কার বিরুদ্ধে কী ওয়ারেন্ট ছিল তা জানতাম না।

তিঁনি বলেন- সংঘবদ্ধ একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে ওয়ারেন্ট থাকা রুবেলকে পাঠিয়েছেন কেক নিয়ে, যা পরে বুঝতে পেরেছি। এমনকি সেই ছবি পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হয়েছে ১৪ দিন পর। মূলতঃ গভীর ষড়যন্ত্র করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র আমার চাকরিজীবনের এই ক্ষতিটি করেছেন।