আজ, শনিবার | ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



চকরিয়ায় আলোচিত ব্যবসায়ী লতিফ হত্যায় প্রধান কিলার মিজান পটিয়া আটক

হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছায় ইয়াবা নিয়ে ধরা দিলেও বাঁচতে পারেনি খুনি

চকরিয়া প্রতিনিধি
কক্সবাজারের চকরিয়ায় আলোচিত ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান কিলার মিজানুর রহমান (৪২) হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরে ধরা দিলেও বাঁচতে পারেনি। তাকে পটিয়া থানায় আটক করা হয়েছে। ঘাতক মিজান ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার বালকদিয়া বিনয় কাঠি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মৃত জলিল আকনের ছেলে।

নিহত ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ (৩৬) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের সুফিপাড়া এলাকার মৃত ইলিয়াছ সওদাগরের ছেলে ও চকরিয়া পৌর শহরের হাইস্কুল সড়কের কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ী ও বিকাশ এজেন্টদার।

এর পূর্বে গত শুক্রবার (৭জানুয়ারী) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পৌরশহরের চিংড়ি চত্বর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকান্ডে সন্দেহজনক আসামী মো. নয়ন (৩০)কে। সে চকরিয়া পৌরশহরের নামার চিরিঙ্গা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিবুর রহমানের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাইস্কুল সড়কের পাশে লতিফ উল্লাহর কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিকাশ এজেন্ট রয়েছে। ৩জানুয়ারী রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার আগে একদল দুর্বৃত্ত তাঁর দোকানে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন লতিফকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ সূত্রে জানায়, ঘাতক মিজান ব্যবসায়ী লতিফ হত্যা মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম “খ” সার্কেল” পটিয়ার সাথে মাদক মামলায় জেলে জেতে অভিনব কন্ট্রাক্ট করে। তার ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল সেটও বন্ধ রাখে। তারই আলোকে গত ১৩ জানুয়ারী সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ৫০০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহকারে আটক হয় ঘাতক মিজান। পরে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দিয়ে পটিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিদর্শক মুহাম্মদ খোরশেদ আলম। লতিফ হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত মিজানকে গ্রেফতার করতে র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তার দুইটি মোবাইল টেকিং করতে থাকলে তার সর্বশেষ লোকেশন পাওয়া যায় পটিয়া থানায়।

চকরিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মুহাম্মদ জুয়েল ইসলাম বলেন, নয়নকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ঘাতক মিজানের নাম্বারে লতিফ উল্লাহর বিকাশ এজেন্ট থেকে ৩০হাজার টাকার লেনদেনও হয়। এরপর ওই এলাকার বিভিন্ন সিসি টিভির ফুটেজ ও ঘাতক মিজানের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল সেটের কল রেকর্ড এর সূত্র ধরে প্রধান কিলার মিজানুর রহমানকে গ্রেফতারে পুলিশসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাঠে নামেন। ১৪জানুয়ারী সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘাতকের মোবাইলে পটিয়া থানায় সর্বশেষ লোকেশন নিশ্চিত করে র‌্যাব। তাকে পটিয়া থানা পুলিশ মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে প্রেরণও করে। পরে ১৫জানুয়ারী বিকেলের দিকে লতিফ হত্যাকান্ডে জড়িত প্রধান কিলার ঘাতক মিজান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত হন চকরিয়া থানা পুলিশ। পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেন তাকে কোথাও খুজে না পায় সেজন্য মাদক মামলায় জেল হাজতে থাকার অভিনব কৌশলটি করেছিলো ঘাতক মিজান।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গণি বলেন, ঘাতক মিজানুর রহমানকে লতিফ হত্যা মামলায় শূন্য অ্যারেষ্ট দেখানো হচ্ছে। তাকে খুব শীঘ্রই চকরিয়া আদালতে এনে রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ডে আসার পর ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্যযে, গত জানুয়ারী (সোমবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাইস্কুল সড়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ (৩৬)কে।