মোহাম্মদ হাসান :
কক্সবাজারে মোবাইল ফোনে ধারণকৃত প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ব্যবসায়িক অংশীদার ও বন্ধুকে কৌশলে তুলে নিয়ে হত্যার অভিযোগে আরেক বন্ধুকে গ্রেফতার করেছেন র্যাব।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. শরীফ আহসান।
র্যাব জানিয়েছে, গত ৭ জুলাই সকালে রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খাদেম পাড়ায় রেললাইনের পূর্বপাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে র্যাব অভিযান শুরু করে।
নিহত আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া ঘাটপাড়ার মৃত মো. নবী হোসেনের ছেলে।
ঘটনায় গ্রেফতার মো. শাহেদ হোসেন (৩০) রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী সিকদার পাড়ার মো. মতিউর রহমানের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর শরীফ আহসান বলেন, ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শাহেদ হোসেন পরস্পর ব্যবসায়িক অংশীদার এবং ঘনিষ্ট বন্ধু। শাহেদ হোসনের এক ভগ্নিপতিসহ তিনজনের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কক্সবাজার সদরের লিংকরোড এলাকায় ভিশন কোম্পানির ইলেক্ট্রনিক পণ্যের একটি শো-রুমের দোকান রয়েছে।
গত ৭ জুলাই আবদুল্লাহ আল মামুনের মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে অভিযানে নামে র্যাব। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে লিংকরোড বাজার এলাকা থেকে ব্যবসায়ী শাহেদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যার ঘটনার মূল রহস্য বের হয়ে আসে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ হোসেন তথ্য দিয়েছে, ঈদগাঁও উপজেলার এক তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের এক পর্যায়ে শাহেদ হোসেন নিজের মোবাইল ফোনে দুইজনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে রাখেন। পরে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে প্রেমিকা সামনা-সামনি এসে ওই ছবি ও ফুটেজ মুছে ফেলার জন্য তাকে (শাহেদ) চাপ দেয়।
কিন্তু প্রেমিকার অজ্ঞাতে শাহেদ ওই ছবি ও ফুটেজ ব্যবসায়িক অংশীদার এবং ঘনিষ্ট বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মামুনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে সংরক্ষণ করেন। পরে তিনি প্রেমিকার সামনে গিয়ে নিজের মোবাইল ফোন থেকে ওইসব ছবি ও ফুটেজগুলো মুছে ফেলেন।
মেজর শরীফ আহসান বলেন, পরে মামুনের কাছ থেকে শাহেদ ওই ছবি ও ফুটেজগুলো ফেরত চায়। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টার পরও ছবি-ফুটেজগুলো ফেরত নিতে ব্যর্থ হওয়ায় শাহেদ ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গ্রেফতার শাহেদের স্বীকারোক্তির বরাতে র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও জানান, পরিকল্পনা মতে গত ৬ জুলাই রাত ৮ টার দিকে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা এলাকাস্থ ভিশন শো-রুম থেকে মামুনকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বাহারছড়া বাজারে ডেকে নেন শাহেদ। পরে ঈদগাঁওতে জরুরি কাজের কথা জানিয়ে একই মোটরসাইকেল যোগে দুইজনে রওনা হন।
পথে তারা রশিদনগর ইউনিয়নের কালিরছড়া বাজারের একটু আগে পৌঁছালে শাহেদ মোটরসাইকেলটি থামানোর জন্য বলেন। এ সময় আগে থেকে সেখানে ওঁৎপেতে থাকা ৩-৪ জন দুর্বৃত্ত মামুনকে উঠিয়ে নিয়ে নেয় ও তার মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। পরে মামুনকে রশিদনগর ইউনিয়নের খাদেম পাড়ায় রেললাইনের পূর্ব পাশে নিয়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। গ্রেফতার শাহেদকে রামু থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
© 2021 - All Rights Reversed Coxs TV | Web Developed by Hostbuzz Inc