কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইসলামনগর। এটি পাহাড় বৈশিষ্ট গ্রাম। এখানে রয়েছে কয়েক হাজার জনগোষ্টীর বসবাস। পাহাড় বেষ্টিত রিজাভ ভূমি হলেও মানুষের বসবাস স্বাভাবিক। বনবিভাগ এই ভূমি দেখবাল করলেও এক প্রকার তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু বিভিন্ন স্পটে রয়ে গেছে শতবর্ষী অসংখ্য মাদারট্রি।
অনেকেই রিজাভ ভূমিকে বসবাস উপযোগি করতে পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করেন। বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনে গৃহহারা, ভীটে-বাড়ি হারা মানুষের যাওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। গত কয়েকদিন ধরে চলছে ভারি বর্ষণ। ফলে ভাঙ্গছে পাহাড়ের পাদদেশ ও টিলা শ্রেণীর জমি।
জানাগেছে, গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কৈয়ারবিল ইউপি থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন মামুনুর রশিদ মামুন। তিনি ইসলামনগরের ভেতরে পাহাড় সমতল করে বহুতল ফাউন্ডেশন দিয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। সম্প্রতি সময়ে আরো একটি বাড়ির কাজ শুরু করেন। পাকা ঘরের সীমানায় নির্র্মাণ করেন পাকা বাউন্ডারী। গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণের ফলে পাহাড় ধ্বসে ভেঙ্গে পড়েছে তার বাড়ির সীমানা দেয়াল। বাউন্ডারী দেয়াল ভেঙ্গে পাশ^বর্তী ইসলামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচল পথের উপর পড়ে যাওয়ায় স্কুল শিক্ষার্থীদের যাতায়াত চরম হুমকির মুখে পড়ে। স্থানীয়দের অভিমত; দেয়াল ধ্বসে পড়ার এই দূর্ঘটনাটি স্কুল চলাকালীন সময়ে ঘটলে অনেক শিক্ষার্থী হতাহত হয়ে যেত। বর্তমানে পাহাড়ী রিজাভ ভূমিতে পাহাড় সংস্কার করে তিনি আরো একটি পাকা দালান নির্মাণকাজ শুরু করায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় প্রতিবেশীরা। ইসলামনগর এলাকার অন্যান্য স্পটেও চলছে একইভাবে পাহাড় কেটে সংস্কার করে বসতী নির্মাণ।
ইতিপূর্বে পাহাড় ধ্বসে ঝুঁকিপূর্ণের আশঙ্কা প্রকাশ করে উল্লেখিত মামুনুর রশিদ গংয়ের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চকরিয়া বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন রশিদুল ইসলাম নামে তার এক প্রতিবেশী। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) চকরিয়া সরে জমিনে তদন্তও করেন। তার কোন প্রতিকার না পাওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েকদিনের বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে বিশাল আয়তনের এই বাউন্ডারী ওয়ালটি ভেঙ্গে পড়ে এবং বড় ধরণের প্রাণঘাতি থেকে রক্ষা পায়।
মামুনের পাশ্ববর্তী বাসিন্দা মোঃ রশিদুল ইসলাম জানান, উঁচু নীচু পাহাড়ি শ্রেণীর জমি হওয়ায় আমার বাড়ি সহ আরো চারটি বাড়ি মামুনের বাড়ির দেয়ালের নিচে। ফলে মারাত্মক ভয় ও হুমকিতে বসবাস করেন তারা। দিন-রাত কাটে অনিরাপদ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে। একদিন হয়তো আমি এবং আমার পরিবার ও পাশের পরিবার সমূহ মাটি ধ্বস কিংবা দেয়াল চাপা পড়ে জীবনাবশান হয়ে যেতে পারে। তাই তারা এলাকার সচেতন মহল ও প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য আহবান করেন। এনিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে পাহাড় ধ্বসে জানমালের বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্খা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদুল করিম জানান, প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় অনেক অনাকাংক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। তবে, বড় ধরনের দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল এলাকার জনগন। অনুরোধ থাকবে, জনগণের কথা চিন্তা করে ভারসাম্যপূর্ন দেয়াল কিংবা স্থাপনা নির্মান করা। যাতে এই রকম ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়।
জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ মামুন জানান, তিনি কোন ধরনের মাটি কাটেননি। এটি সম্পর্ণ মিথ্যাচার। এই জায়গায় ২০/৩০ বছর আগে লাগানো গাছ সহ ভেঙ্গে পড়েছে। তাহলে কিভাবে মাটি কাটা হল। তার দাবী- প্রতি বছর এই জায়গাতে দেয়াল ভেঙ্গে যায়। তাই নিজের অনেক অর্থ ব্যয় করে সবার সুবিধার্থে ১০ ইঞ্চি করে ওয়াল নির্মাণ করে রক্ষার চেষ্টা করেছি। নতুন করে পাকা ঘর নির্মাণ সঠিক নয়, ছোট্ট এক এক তলা বিশিষ্ট স্টোর বানানো হচ্ছে।
ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: মেহরাজ উদ্দিন বলেন, পাহাড় ধ্বসে জনৈক মামুনের বাড়ির সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে স্কুল চলাচল পথে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় সরে জমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নলবিলা ফরেষ্ট বিট কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, পাহাড় ধ্বসে দেয়াল ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্বে অভিযুক্ত মামুনদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেলে তা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীকে তদন্তের নির্দেশ দেন। যেহেতু পাহাড় কাটা, রিজাভ ভূমিতে পাকা দালান নির্মাণ ও সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে, সেহেতু তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ের পাদদেশে ঝূঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের চিহ্নিত করে চলতি বর্ষা মৌসুকে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।