ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে সাংবাদিকদের সাজা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) রহমত উল্লাহ। একই সঙ্গে প্রেসক্লাব সভাপতিকে সাংবাদিকদের ছবিসহ তালিকা দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। প্রেসক্লাবের বাইরে যারা থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে সাংবাদিক মহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে এই মন্তব্য করেন জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ।
ঐ সভায় পুলিশ সুপারের বক্তব্যের একটি অংশ ছিল:
“কে সাংবাদিক আমরা জানি। ধরুন, আমি এখানে কালের কণ্ঠ পত্রিকার (উদাহরণস্বরূপ) সাংবাদিক। একটি জাতীয় পত্রিকার জেলায় সর্বোচ্চ ১ জন অথবা ২ জন প্রতিনিধি থাকবে। কিন্তু কেউ যদি ইউনিয়ন পর্যায়ের কালের কণ্ঠ (উদাহরণস্বরূপ) প্রতিনিধি পরিচয় দেয়, তাহলে এভাবে পুরো জেলায় একশ থেকে দুইশ সাংবাদিক হয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন,”চিন্তা করতে হবে ঢাকা জেলা কেন্দ্রীক কতজন সাংবাদিক কাজ করে। এখন একজন সাংবাদিক যার শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, সেও সম্পাদক হয়ে গেছে। আমি সাংবাদিক হওয়ার জন্য আমার লেখাপড়ার যোগ্যতা না থাকা মানা যেতে পারে। কিন্তু একজন এডিটর বা চিফ এডিটর অবশ্যই যোগ্য হতে হবে। একটি সংবাদপত্রের অনুমোদন পেতেও নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড ফলো করতে হয়। যেমন, ওষুধের দোকান চালাতে হলে ফার্মাসিস্ট লাইসেন্স লাগে। এই বিষয়টি আমরা প্রেসক্লাব সভাপতি বা রিপোর্টার্স ইউনিটি অথবা জেলা প্রেসক্লাবের সঙ্গে আলোচনা করে তালিকার বাইরের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা যায়। অথবা সাংবাদিক পরিচয়ের অপব্যবহারের অভিযোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শাস্তি দেওয়া যায়।”
তিনি কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”আমরা একটা তালিকা করি, মাহবুব ভাই। এটা কি সম্ভব?”
সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া
এসপির এমন বক্তব্যে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা ফুঁসে উঠেছেন। কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদের সভাপতি এম এ আজিজ রাসেল বলেন, “আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে সাংবাদিকদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ সুপার। একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে মূলধারার সাংবাদিকেরা মর্মাহত। কক্সবাজার সদর থানার ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমন বৈষম্যমূলক বক্তব্য ইতিহাসে কোনো ডিসি বা এসপি দেননি।”
জাতীয় দৈনিক সকালের সময়ের জেলা প্রতিনিধি শাহেদ ফেরদৌস হিরু বলেন,”কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসির বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। কুতুবদিয়ায় তিন দিন আগে অপহরণ থেকে ফিরে আসা জেলেদের থানায় এনে ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা করেন ওসি। দিবালোকের মতো সত্য এসব ঘটনার তদন্ত না করে, উল্টো জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে সাংবাদিকদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন এসপি। এমন মন্তব্যে মূলধারার সাংবাদিকেরা মর্মাহত।”
এদিকে এসপির বক্তব্যের পর কক্সবাজারের সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এ ধরনের বৈষম্যমূলক বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া, সাংবাদিকদের অধিকার ও পেশাদারিত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলেছেন তারা।