আজ, বৃহস্পতিবার | ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



চকরিয়া কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে  অনিয়ম অসঙ্গতির অভিযোগ, মাউশি’র তদন্ত শুরু 

কফিল উদ্দিন,চকরিয়া:

চকরিয়া সরকারি কলেজের বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়া কর্তৃক কলেজ তহবিলের বিপুল পরিমাণ টাকা তছরুপের ঘটনায় অবশেষে তদন্ত শুরু হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগের আলোকে  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি),ঢাকার মহাপরিচালক এর নির্দেশে গঠিত দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গতকাল সোমবার (২১ অক্টোবর) চকরিয়া সরকারি কলেজে এসে বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (আয়ন ব্যায়ন কর্মকর্তা) ইন্দ্রজিত বড়ুয়া কর্তৃক তার দায়িত্ব পালনকালীন  একবছর একমাস সময়ে কলেজে নিয়মবহির্ভূত নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং বিবিধ খাতে খরচের নামে তহবিলের বিপুল টাকা তছরুপ ও নানা অনিয়ম অসঙ্গতির সত্যতা পেয়েছেন।

মাউশি মহাপরিচালক এর নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির দুই সদস্য চট্টগ্রাম থেকে গতকাল সকাল ৯ টার দিকে চকরিয়া সরকারি কলেজে পৌঁছেন। এরপর তাঁরা কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অপরাপর শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়াকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। এসময় তদন্ত কমিটির সদস্যরা অভিযুক্ত  ইন্দ্রজিত বড়ুয়া দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের খাত ওয়ারী কলেজের আয় ব্যায় এবং উন্নয়ন খাত, আভ্যন্তরিন পরীক্ষা খাত, সরকারি কোষাগারের হিসাব, কেন্দ্র ফ্রি, নৈশপ্রহরী ও অত্যবশ্যাকীয় কর্মচারী খাত এবং বিবিধ খাতে খরচের নামে তহবিলের বিপুল টাকা তছরুপের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।

অবশ্য ইতোমধ্যে কলেজ নিযুক্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুসরাত জাহান দায়িত্ব পালনের শুরুতে আগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কর্তৃক কলেজ তহবিলের বিভিন্ন খাতে অনিয়ম অসঙ্গতি দেখে কলেজ শিক্ষকদের নিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট  একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। কলেজের শিক্ষক প্রনব কুমার বড়ুয়ার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি নানাখাতে তহবিলের অনিয়ম অসঙ্গতির আলোকে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

সেখানে দেখা গেছে, আগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একেএম শাহাবুদ্দিন অবসরে যাবার দিন ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়াকে কলেজ তহবিলের ১ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার ৯৪৩ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে যায়। এতে বলা হয়েছে, কলেজের সাধারণ তহবিলে ৮০ লাখ ৬৭ হাজার ৩১৫ টাকা, স্থায়ী আমানত ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ২৪ টাকা ও হাতে নগদ ২০ হাজার ৬০৩ টাকা স্থিত ছিল।

২০২৩ সালের ১৮ জুলাই তারিখে দায়িত্ব নিয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়া নীতিমালা লঙ্ঘন করে একক ক্ষমতাবলে কলেজের নানাবিধ উন্নয়নের নামে তহবিলের বিপুল টাকা ব্যাংক থেকে নামে বেনােম চেক ইস্যু করে উত্তোলন পুর্বক নয়-ছয় করেছেন। কলেজের উন্নয়ন খাতে (৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী থেকে ২০০ টাকা করে) বার্ষিক ১০ লাখ টাকা আয় করলেও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়া তাঁর দায়িত্ব পালনকালীন ১৩ মাস সময়ে ৭৬ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূত ভাবে খরচ দেখিয়েছেন। অথচ নীতিমালায় বলা আছে, কলেজের উন্নয়নখাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একবছরে খরচ করতে পারবেন সর্বোচ্চ ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

কলেজ কর্তৃক গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়ার সময়ে আভ্যন্তরিন পরীক্ষা খাতে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৪৮ টাকা, সরকারি কোষাগারে ৯৭ হাজার ৭০৬ টাকা, কেন্দ্র ফ্রি খাতে ৪৭ হাজার ৭৫০ টাকা, নৈশপ্রহরী ও অত্যবশ্যাকীয় কর্মচারী খাতে ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৮ টাকা নিয়মবহির্ভূত ভাবে বিবিধ খাতে খরচ করার কারণে ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

এ সংক্রান্ত অনিয়ম অসঙ্গতি এবং কলেজ তহবিলের টাকা ঘাটতির বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ গত ১০ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, ঢাকার মহাপরিচালক এর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। একইসঙ্গে অভিযোগের অনুলিপি জাতীয় বিশ্বিবদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এর চেয়ারম্যান এবং পরিচালক ও কলেজের সভাপতি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে জমা দিয়েছেন।

ওই লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহাপরিচালক এর নির্দেশে গঠিত দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গতকাল চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়া সরকারি কলেজে এসে অভিযোগসমুহের তদন্ত শুরু করেন।

এদিন সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধা ছয়টা পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম চলে বলে কলেজ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্তের সময় কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সকল বিভাগের দায়িত্বশীল শিক্ষক ও অভিযুক্ত সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা, ওইসময় ১৩ মাস দায়িত্ব পালনকালীন সময় ইন্দ্রজিত বড়ুয়া কর্তৃক কলেজের আয়-ব্যায়ের বিভিন্ন কাগজপত্র, ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখেন। এসময় নিয়মবহির্ভূত ভাবে উন্নয়নের নামে কলেজ তহবিলের টাকা নানাভাবে খরচ করার মাধ্যমে তছরুপের বিষয়ে নিশ্চিত হন।

অভিযোগ উঠেছে, ১৩ মাস দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়া কলেজের উন্নয়ন খাতে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন পুর্বক বেশিরভাগ লেনদেন করা হয়েছে। কলেজের জন্য খরচের বিপরীতে তিনি বিভিন্ন সময় অনুগত শিক্ষক অথবা কর্মচারীর নামে চেকসমুহ ইস্যু করলেও পরে দেখা গেছে, ব্যাংক থেকে তিনিই টাকা উত্তোলন করেছেন। আবার কলেজে রক্ষিত চেকবইয়ের মুন্ডায় চেক গ্রহীতা হিসেবে কারো স্বাক্ষরও নেই। এমনকি নতুন অধ্যক্ষকে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পরদিন কৌশলে তিনি চেকবই থেকে ৯ টি চেক নিজের হেফাজতে নিয়ে রেখে দেন। পরে অবশ্য চেকের এসব অসঙ্গতির বিষয়ে

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে স্বীকার করে স্বাক্ষরও দিয়েছেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া কলেজের বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়া বলেন, মাউশির তদন্ত কমিটি আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে আমার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কোনধরনের অনিযম অসঙ্গতির ওনারা পাননি। এছাড়া তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আমি বেশিকিছু বলবো না। মুলত আমাকে হয়রানি করার জন্য এসব চক্রান্ত করা হচ্ছে।

ছবি: চকরিয়া সরকারি কলেজের বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিত বড়ুয়া