কোটা আন্দোলন-সংক্রান্ত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি চাই প্রত্যেকটা জিনিসের তদন্ত হোক, কারা এর পেছনে? কী কীভাবে? কী কী ঘটনা ঘটেছে? সে জন্য জাতিসংঘেও আমি আবেদন করেছি, তারা বিশেষজ্ঞ পাঠাক। অন্য কোনও দেশ যদি চায়, তারা বিশেষজ্ঞ পাঠাক। কারণ, আমি চাই এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হোক, সে যে-ই দায়ী থাক। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে আমাদের।’
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর খামারবাড়ির কেআইবি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষক লীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে কারও দাবি অপেক্ষায় রাখিনি। তার আগেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিই। ঘটনা যখন হয়, তখন মাত্র ছয় জন মারা গিয়েছিল। এখন আরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। আমি এখন তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি করে দিয়ে, তাদের কর্মপরিধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গড়বো আর কেউ এসে খালি ভেঙে তামা তামা করে দেবে, আমার দেশের মানুষকে কষ্ট দেবে, দেশের মানুষ ভুক্তভোগী হবে; দেশের মানুষে ভাগ্য নিয়ে খেলা, এটাই তো আমি দেখি সব থেকে তাদের বড় জিনিস। জঙ্গি সারা বিশ্বব্যাপী কী ঘটনা ঘটিয়েছে? বাংলাদেশে হোলি আর্টিজানের পর আমরা আর একটা ঘটনা ঘটতে দিইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থেকেছে। নিজেরা জীবন দিয়েছে, কিন্তু জঙ্গিবাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। আজ কোটা আন্দোলনের ছত্রচ্ছায়ায় এরা এসে জঙ্গির সেই ভয়াল দাঁত দেখালো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ একটু আরামে থাকবে, জনগণ একটু ভালো থাকবে, জনগণ একটু সুস্থভাবে চলবে, সুপেয় পানি-পয়োনিষ্কাশন থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গায় আগুন দিয়ে পোড়ানো। এটা কোন ধরনের আন্দোলন? আর সেই সাথে আজ কত মানুষের জীবন গেছে! চারদিক থেকে অস্ত্রধারী কোথাও…ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০ কামরা, সেখানে এখন ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে হাতে অস্ত্রসহ; কারও হাতে তরবারি, কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে শাবল নিয়ে পুরো তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। ছেলেদের সব জিনিস পুড়িয়ে দেওয়া; মেয়েদের হোস্টেল; রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজ—মেয়ে হয়ে মেয়েদের ওপর যে টর্চার, পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে টর্চার করেছে, ঠিক সেই ধরনের টর্চার করলো মেয়েদের ওপর।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা ছাত্রলীগ করে, ছাত্রলীগ করতে পারবে না! তাদের ওপর জুলুম অত্যাচার। এক মেয়েকে ১০০ বার উঠবস করালো। এক মহিলা সাংবাদিককে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে, তাকে উলঙ্গ করে, তার ওপর পাশবিক অত্যাচার! এমন কিছু নেই, তিন জন সাংবাদিকের ওপর এই অত্যাচার করেছে। এদের হাত থেকে সাংবাদিক রেহাই পায়নি, সাংবাদিক হত্যা করেছে। সাংবাদিককে মারধর করেছে। সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে কেউ তো রেহাই পায়নি।’
আমি আগেই সাবধান করেছিলাম
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের নাম দিয়ে নাশকতা করা, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা; আমি আগেই সাবধান করেছিলাম, ১৭ তারিখ আমি টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে অভিভাবকদের বলেছিলাম, শিক্ষকদের বলেছিলাম, এখানে আপনাদের সন্তানের জীবনের ঝুঁকি আছে। আপনারা সন্তানদের বের হতে দিয়েন না। কারণ আমি তো জানি এ দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস কারা করে। আমি সতর্ক করেছি, অ্যাপিলেট ডিভিশন রায় দেবে, আপনারা হতাশ হবেন না। আমি তো রায়ের ব্যাপারে বলতে পারি না যে এই রায় দেবে। কিন্তু আমরা তো বললাম, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আপত্তি জানাবো না। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে আপত্তি না জানালে তাদের যেটা দাবি, সেটা এসে যাবে। আমরা সেটুকু করতে পারি আইনতভাবে, যদি আমি কোর্ট-কাচারি, আইন-আদালত মেনে চলি। সেটা আমি বললাম, আপনারা হতাশ হবেন না। তারপরও তারা না থেমে…! আজ যে সারা দেশে এতগুলো প্রাণ ঝরে গেলো, এ দায়-দায়িত্ব কার?’
রাখে আল্লাহ, মারে কে
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারপর এই যে ঘটনাগুলো ঘটলো। আজ দেশবাসীর কাছে এরা তো মিথ্যা-অপবাদ চালিয়েই যাচ্ছে। আমি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেবো, সেটা তো কখনও হতে পারে না। কারণ আমি তো সব কিছু হারিয়েছি। আর আমার নিজের জীবনটাও তো আমি জানি না। এরাই তো বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এখন রাখে আল্লাহ মারে কে!’