আজ, শনিবার | ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া গেলো রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের ১১টি সিন্দুকে পাওয়া গেলো রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এটি এই মসজিদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ দানের টাকা। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে টাকার পরিমাণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান।

শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মসজিদের ১১টি দানবাক্স পর্যায়ক্রমে খোলা হয়। সেখানে পাওয়া যায় মোট ২৯ বস্তা টাকা। দেশি টাকার পাশাপাশি সেখানে ছিল স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রাও। জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তায় বস্তাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে, গত ১৭ আগস্ট খোলা হয়েছিল সিন্দুকগুলো। এ হিসেবে এবার ৩ মাস ১৪ দিন পর খোলা হলো মসজিদের সিন্দুক। তখন সেগুলোতে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া যায়। তার আগে গত ২০ এপ্রিল সিন্দুক খুলে পাওয়া যায় ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। তারও আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পাওয়া যায় ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এবার দানের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। টাকাগুলো গুনতে সাড়ে চারশ লোকের ১১ ঘণ্টা সময় লাগে।

সিন্দুক খোলার সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সেনা, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। টাকা গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত মসজিদ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাবলয় বাজায় ছিল।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিজাবে রহমতের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করেছেন। তা ছাড়া দুটি মাদ্রাসার প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৭০ জন কর্মী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় সাড়ে চারশ লোক টানা ১১ ঘণ্টা টাকা গণনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম জানান, এবার মসজিদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পারিমাণ টাকা পাওয়া গেছে। দেশি টাকা ছাড়াও বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রুপার অলংকারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাওয়া গেছে। দেশি টাকাগুলো তাদের ব্যাংকে জমা হবে। অন্যগুলো কমিটির জিম্মায় থাকবে।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। ২০২৪ সালে আজ নিয়ে তিনবার খোলা হলো সিন্দুক। আগের দুবারে পাওয়া যায় ১৪ কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৬০ টাকা। আর এবার পাওয়া গেলো আট কোটিরও বেশি টাকা।

স্থানীয়রা জানান, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়, এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে। দান করেন মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলংকারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করেন লোকজন।

তবে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে প্রাপ্তির আনন্দ, না পাওয়ার বিরহবেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে।

জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে থাকে মসজিদ কমিটি। যে কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক।

মসজিদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, দানের টাকায় মসজিদের নিয়মিত খরচ চালিয়ে ব্যাংকে জমানো হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। মসজিদ ঘিরে এখানে ছয়তলাবিশিষ্ট একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে একসঙ্গে ৫০ হাজার  মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবেন। এর মধ্যে পাঁচ হাজার নারীর জন্য আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরও বিভিন্ন আয়োজন। এজন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।