ঈদগাঁও থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার।
কক্সবাজারের সদরের চৌফলদন্ডী নতুন মহাল রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসার বহিস্কৃত সুপার কর্তৃক হাইকোর্টের রায়কে অগ্রাহ্য করে অবৈধ এডহক কমিটি গঠন চেষ্টার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষক- কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিগত প্রায় দুই মাস পূর্বে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি অনিয়ম, দূর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে মাদ্রাসার সুপার মওলানা মিজানুর রহমানকে সময়িক বহিষ্কার করে সহ-সুপার মাওলানা ফজলুল করিমকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব প্রদান করে। অনিয়ম আড়াল ও তদন্ত কার্যক্রকে প্রভাবিত করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বোর্ড বরাবর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার আবেদন করে বহিস্কৃত সুপার। এর সুত্র ধরে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ৮ নভেম্বর কমিটি ভেঙ্গে দেয়। এর বিরুদ্ধে পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে ২০ নভেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট ভেঙ্গে দেয়া পূর্বের কমিটি পুনর্বহাল করে। এরপরও বহিস্কৃত সুপার মিজানুর রহমান তার বহিষ্কারাদেশ গোপন ও কমিটি পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়কে অগ্রাহ্য করে গোপনে অবৈধ এডহক কমিটি গঠনে বোর্ডে আবেদন করে। কমিটি হাইকোর্ট কর্তৃক পুনর্বহাল হওয়ার পরও বোর্ড কিভাবে ২৩ নভেম্বর এডহক কমিটি গঠনের অনুমতি দেন তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভুমিকায় প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি যে, সুপার তার বহিস্কারাদেশ ও আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট এসব তথ্য গোপন করে তাদের প্রভাবিত করে কমিটি বহালবস্থায় এডহক কমিটি গঠনের পায়তারা করছে।
উল্লেখ্য, উক্ত বহিস্কৃত সুপার ইতিপূর্বে ভূয়া রেজ্যুলেশান করে নিজের বোন জামাই মো: আলমগীর সহ আরো তিনজনকে ২০০৪ সালে নিয়োগ দেখিয়ে অবৈধ পন্থায় নিয়োগ সম্পন্ন করে সে সময়কার পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ (মৃত বর্তমানে) সকল সদস্য ও বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী ও কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে এমপিওভূক্তির জন্য ফাইল প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করে। এছাড়া উক্ত বহিস্কৃত সুপার নিয়োগের পর থেকে মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের কোন হদিস নেই।এমন কি বিগত কয়েক মাস পূর্বে অনুষ্ঠিত কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায়ও বড় ধরনের বাণিজ্য করে বলে অভিযোগ উঠে সুপারের বিরুদ্ধে । যা ভূক্তভোগীরা সভাপতি রফিকুল ইসলামকে লিখিতভাবে অভিযোগ করলে তদন্তের স্বার্থে সভাপতি উক্ত নিয়োগ সম্পন্নে বিলম্ব করে। পরে সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুপারকে জরুরি এসব অভিযোগ নিরসনে বারবার তাগাদা দেন। সে এসব কর্ণপাত না করে সভাপতির অগোচরে রেজ্যুলেশান তৈরি ও স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ সম্পন্নের অপচেষ্টা ফাঁস হলে সুপার তার জালিয়তি আড়াল করতে রাতারাতি মাদ্রাসার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ নথিসহ সবকিছু গোপনে সরিয়ে ফেলে।এতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি তাকে জরুরি ভিত্তিতে শোকজ করে সাময়িক বহিস্কার করে। স্পষ্ট ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সুপার সভাপতি ও শিক্ষকদের নামে আকাশি অভিযোগে থানায় একাধিক জিডিও করে। সর্বশেষ সুপার বহিষ্কার অবস্থায় প্রায় দু’মাস মাদ্রাসায় উপস্থিত না থেকেও হঠাৎ একদিন মাদ্রাসায় এসে উপস্থিতি খাতায় ফ্লুইড ব্যবহার করে স্বাক্ষর করে। সভাপতি এর কারণ জানতে চাইলে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সভাপতির সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে তার পূর্বের সব অপকর্ম আড়াল ও কমিটির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষেপিয়ে তুলতে সভাপতি ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও দায়ের করে। এছাড়া সে নিজের অপকর্ম সম্পুর্ন আড়াল করে কক্সবাজার জেলা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদকে মিথ্যা তথ্যে প্রভাবিত করে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করায়। প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, পরিচালনা কমিটি এবং সকল শিক্ষক কেন এ সুপারের শত্রু এবং কেন সে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করল তা সরেজমিনে দূর্ণীতির নথি ও কার্যক্রম দেখলে সহজেই বোধগম্য হবে। বহিস্কৃত সুপারের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে মাদ্রাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম চরম ব্যহত হচ্ছে। এরপরও সভাপতি ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করে সম্ভাবনাময়ী প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এ সুপার। তাই পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ সরেজমিনে সুপারের এ অনিয়মের নথিপত্র দেখে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
© 2021 - All Rights Reversed Coxs TV | Web Developed by Hostbuzz Inc